১০০+ বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক ছন্দ, বৃষ্টির শায়েরী, বৃষ্টির কবিতা, বৃষ্টি নিয়ে ছোট ছোট কবিতা, বৃষ্টির গান

বৃষ্টি নিয়ে ছন্দ, বৃষ্টির কবিতা, বৃষ্টি নিয়ে ছোট ছোট কবিতা, বৃষ্টির শায়রী, বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক শায়েরী, বৃষ্টি নিয়ে ছোট ছোট লাইন ,বৃষ্টির গান, বৃষ্টি নিয়ে শর্ট কবিতা: বৃষ্টি সবকিছু প্রভাবিত করে। মানুষ যখন অলস বোধ করে তখন তারা বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পছন্দ করে। আমরা বৃষ্টিকে অভিশাপ দিই যখন এটা আমাদের পরিকল্পনা নষ্ট করে দেয়। আমরা ভয় পাই যখন এটি ঝড়ের সাথে আসে। এটি একটি শক্তিশালী রূপক তৈরি করে। বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক ছন্দ ও ছোট ছোট কবিতা-গুলো তার সমস্ত ছদ্মবেশে বৃষ্টি উদযাপন করে। বৃষ্টির কথা মনে এলেই মনে পড়ে যায় প্রিয় মানুষটির কথা। মনে পড়ে তার সাথে কাটানো ভালোবাসা’র গল্প। প্রেম ভালোবাসা ও বৃষ্টি একই সুতোয় গাঁথা। বৃষ্টি নিয়ে প্রেমের কাব্য কিংবা গান লিখে যে কত কবি দিস্তা দিস্তা কাগজ শেষ করেছেন তার কোনো হিসেব নেই। আজ আমরা পাঠকদের জন্য সেরা বৃষ্টির কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছি। বৃষ্টি নিয়ে ছোট ছোট ছন্দ কিংবা সেরা রোমান্টিক বৃষ্টির কবিতা  উপভোগ করুন ও শুষ্ক থাকুন।

বৃষ্টি নিয়ে ছন্দ : 

এই মেঘলা দিনে একলা,
ঘরে থাকেনা তো মন,
কাছে যাবো কবে পাবো,
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
-হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

সন্ধ্যা হলে বৃষ্টি নামে, চিঠি আসে হলুদ খামে
সেই চিঠিতে লেখা শুধু- ব্যথা কোথায় বলতে পারো?
কোথায় ব্যথা বলবে কে সে হয়তো-বা বুকের বামে
হৃদয় চিরে ভিজিয়ে দিয়ে হয়ে যাও নতুন কারো।
-রেদোয়ান মাসুদ

যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো,
চলে এসো, এক বরষায়…
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে
যদি কোমলও শ্যামলও ছায়
চলে এসো, তুমি চলে এসো এক বরষায়
-হুমায়ূন আহমেদ

দূর আকাশে বৃষ্টি নামে বৃষ্টি নামে নয়নে
জল পিপাসায় মরছি ধুকে পড়ে আছি শয়নে,
তাকাও যদি মায়ার চোখে হৃদয় ভিজবে বৃষ্টিতে
ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবো ভেজা চোখের দৃষ্টিতে।
-রেদোয়ান মাসুদ

আরও পড়ুন… বৃষ্টি নিয়ে উক্তি 

আমার সারাটি দিন,
মেঘলা আকাশ বৃষ্টি,
তোমাকে দিলাম।
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।
– শ্রীকান্ত আচার্য

তুমি থাকো যেই শহরে নামে শুধু বৃষ্টি
আমার শহর রোদে পোড়া হারিয়েছি দৃষ্টি
দাও যদি সুযোগ ঐ শহরে, কি মধুর সৃষ্টি
পড়বে না যে চোখের পলক হাসিটা যে মিষ্টি।
-রেদোয়ান মাসুদ

বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক কবিতা : 

বৃষ্টির সঙ্গে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব ভালোবাসা আছে। কারও কারও কাছে এটি আশা, আনন্দ, শান্তি ও প্রকৃতির শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে যখন অন্যদের জন্য এটি তাদের জীবনে বিষাদ ও গ্লানি নিয়ে আসে। এটা সব আমাদের হৃদয় ও মন কিভাবে ব্যাখ্যা করতে চান উপর নির্ভর করে। এ কারণে, আপনার মেজাজ অনুযায়ী বৃষ্টি সম্পর্কে সেরা কবিতা চয়ন করতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমরা বিভিন্ন বিখ্যাত কবিদের কাছ থেকে কিছু সেরা কবিতা সংগ্রহ করেছি। আসুন বৃষ্টির কবিতা-য় হাত দেই। কারণ প্রকৃতি কিংবা বৃষ্টি নিয়ে  কবিদের চেয়ে কেউ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে,
হয়ে যাবে দেখা মাঝ রাস্তায়।
থাকবে না সাথে কোনো ছাতা,
ভিজে যাবে চটি, জামা,মাথা।
দোকান-পাট সব বন্ধ,
শুধু তোমার আমার হৃদয়ে ভিজে
মাটির সোঁদা গন্ধ।
-অঞ্জন দত্ত

এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না।
বৃষ্টির ছন্দে বকুলের গন্ধে।
আমায় তুমি ফেলে যেও না।।
তুমি ছাড়া জীবনে
আর তো কিছুই চাইবো না।।
-রুনা লায়লা

মেঘ জমেছে, আকাশ কাপছে, চারিদিকে অন্ধকার,
এমন দিনে প্রয়োজন শুধু ভালোবাসার।
আয় না তুই বাইরে আয়, বৃষ্টিতে হই একাকার,
ভিজে ভিজে হয়ে যাই, দুজন দুজনার।
-রেদোয়ান মাসুদ

বৃষ্টির শায়েরী :  

আপনি কিভাবে বৃষ্টি দিনগুলো উপভোগ করেন? ভিজে গিয়ে, নাকি আপনার বারান্দা থেকে আকাশ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা দেখে? আপনি কি কখনও এমন একটি কবিতা পড়েছেন যা আপনাকে কেবল বর্ষাকালকেই উপভোগ করে না বরং চারপাশে বৃষ্টির ঋতু ছাড়াই এই বর্ষার আনন্দ দেয়। এখানে রোমান্টিক বৃষ্টির কবিতা রয়েছে , রয়েছে বৃষ্টি নিয়ে সেরা ছন্দ-ও। আপনি সম্ভবত এর কিছু  স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারেন ও দীর্ঘসময় উপভোগ করতে পারেন।

বৃষ্টি তোমাকে চুম্বন করুক
রৌপ্য তরল ফোঁটা দিয়ে বৃষ্টি মাথায় পড়ুক
বৃষ্টি তোমাকে একটা গান গাইতে দিক
বৃষ্টির ফলে ফুটপাতে জল জমুক।
-ল্যাংস্টন হিউজ

বৃষ্টি, মধ্যরাতের বৃষ্টি, বুনো বৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়
এই অন্ধকার কুঁড়েঘরে নির্জনতা
আমার মনে পড়ে যে আমি মরব
আর বৃষ্টি শুনবে না, ধন্যবাদ দেবে না তা কি হয়?
-এডওয়ার্ড টমাস

সে যেন বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে গেল
একজন মানুষের মাংস, চুল ও চোখের উপর
এভাবে চলার আনন্দ কখন
তাকে অবাক করে দিয়েছে:
-অক্টাভিও পাজ

বৃষ্টির দিন শুষ্ক হতে পারে বা এটি আবহাওয়ার একটি  সুন্দর পরিবর্তন হতে পারে। কবিরা উভয় দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারেন। উপরে উল্লেখিত কবিদের  দুর্দান্ত বৃষ্টির কবিতা-র সংকলন রয়েছে। আপনি আপনি বৃষ্টি নিয়ে কবিতা  সংগ্রহে আগ্রহী হতে পারেন। যেহেতু আমরা সবাই সেরা বৃষ্টি নিয়ে কবিতা’র সাথে বেশ পরিচিত, কখনো ভেবেছি, “কেন কবিরা বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক শায়েরী লিখতে এত ভালোবাসেন, অন্য কিছু নয়?” কবিদের জন্য, বৃষ্টির কবিতা শুধু অন্য লেখা নয়; এটি পাঠকদের সাথে সংযোগ স্থাপন ও  বৃষ্টি সম্পর্কে তাদের শক্তিশালী আবেগ এবং অভিজ্ঞতাকে নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করার উপায়। তাদের চিন্তাভাবনাকে শব্দে অনুবাদ করার একটি অনন্য দারুন শৈলী রয়েছে যা একই সাথে পাঠকদের চিন্তাভাবনার সাথে মিলে যায়। এইভাবে, আপনি যদি চলমান বর্ষাকালের জন্য ছোট ছোট বৃষ্টির কবিতা পড়তে চান তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন।

ছড়া; ছোটদের কবিতা, ১০০+ চিরায়িত বাংলা ছড়া

ছড়া; ছোটদের কবিতা, চিরায়িত বাংলা ছড়া, rhyme poem, বিখ্যাত ছড়া কবিতা, Classic poems:  ছড়া বাংলা সাহিত্যের আদিম একটি শাখা যা এখনও প্রচলিত। ছড়াকে ছোটদের কবিতাও বলা হয়ে থাকে। ছড়া সাধারণত স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা হয়ে থাকে। তবে মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তেও ছড়া লেখা হয়। ছড়া শব্দটি কখনও কখনও সংক্ষিপ্ত কবিতার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন একটি নার্সারি রাইম বা ব্যালিওল ছড়া।আদিম যুগ থেকেই ইংরেজি সাহিত্যে ননসেন্স রাইম প্রচলিত রয়েছে।  প্রায় ১৫০০ বছর আগে থেকেই ছড়া লেখা হয়ে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে ছড়া লেখার প্রবণতা কমে গেলেও বাংলা চিরায়িত ছড়া কবিতা’র কদর এখনও কমেনি। ছড়া কবিতা  chora kobita : 

স্বাধীনতার সুখ – রজনীকান্ত সেন

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই-
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই;
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা ‘পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”
বাবুই হাসিয়া কহে- “সন্দেহ কি তায় ?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

গ্রাম – রেদোয়ান মাসুদ

মন টেকে না ইট পাথরের এই শহরে আর
পাইনা শান্তি খুলে রেখেও অট্টালিকার দ্বার
সবুজ ঘেরা গ্রামে গিয়ে শান্তি খুঁজে পাই
গ্রামের সাথে শহরের যে তুলনা আর নাই।
গাছের ডালে দোয়েল কোয়েল গায়-যে কতো গান
সেই গানেতে ভরে উঠে ক্লান্ত দেহের প্রাণ।
নদীর ধারে জেলের জালে ওঠে তাজা মাছ
মাছের স্বাদে মন চায় আমার থাকি বারো মাস।
আম গাছেতে ধরে আছে কত শত আম
জামের ডালে ঝুলে থাকে মিষ্টি কালো জাম।
বিলের ধারে পদ্ম ফোটে সৌন্দর্যের নেই জুড়ি
নৌকা নিয়ে সারাদিন তাই এদিক ওদিক ঘুরি।
রাস্তার পাশে স্বর্ণ লতা গাছের সাথে বায়
শিকড় ছাড়া কেমনে বাঁচে বোঝা বড় দায়।
ডালে ডালে লাল জিলাপির কোনো অভাব নাই
যখন খুশি সবাই মিলে পেড়ে এনে খাই।
মাচার নিচে লাউয়ের সারি আরো কতো কিছু
দাদু যখন তুলে আনে হাটি পিছু পিছু।
মাঠে ঘাটে ছেলে মেয়ে খেলে মিলে মিশে
শহরেতে নেই-কো সুযোগ মরি যেন বিষে।
তাজা গরুর খাটি দুধে দাঁতে লাগে সর
গরুর লাথি খেয়েও তবে করে না যে ডর।
ফুল বাগানে ফোটে কতো গোলাপ জবা বেলী
ভোমরা দেখলে মন চায় আমার দুটি পাখা মেলি।
গ্রামের মানুষ সহজ সরল দেখায় না যে দাম
আহা! এত সুন্দর কেন সবুজের এই গ্রাম।

কানা বগীর ছা – খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন

ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ।
ঐ খানেতে বাস করে
কানা বগীর ছা।
ও বগী তুই খাস কি?
পানতা ভাত চাস কি?
পানতা আমি খাই না
পুঁটি মাছ পাই না
একটা যদি পাই
অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।

সবার আমি ছাত্র – সুনির্মল বসু

আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।

পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।

সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে,
মধুর কথা বলতে।

ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর-
অন্তর হোক রত্ন-আকর;
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।

মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষান দিল দীক্ষা।

ঝরনা তাহার সহজ গানে,
গান জাগাল আমার প্রাণে;
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা।

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।

এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।

খোকন খোকন ডাক পাড়ি – রোকনুজ্জামান খান

খোকন খোকন ডাক পাড়ি
খোকন মোদের কার বাড়ি ?
আয় রে খোকন ঘরে আয়
দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।

মেঘনায় ঢল – হুমায়ুন কবির

শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করে মাঠে চল,
এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।
নদীর কিনার ঘন ঘাসে ভরা
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা
করিস না দেরি–আসিয়া পড়িবে সহসা অথই জল
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা মেঘনায় নামে ঢল।

এখনো যে মেয়ে আসে নাই ফিরে–দুপুর যে বয়ে যায়।
ভরা জোয়ারের মেঘনার জল কূলে কূলে উছলায়।
নদীর কিনার জলে একাকার,
যেদিকে তাকাই অথই পাথার,
দেখতো গোহালে গরুগুলি রেখে গিয়েছে কি ও পাড়ায় ?
এখনো ফিরিয়া আসে নাই সে কি ? দুপুর যে বয়ে যায়।

ভরবেলা গেলো, ভাটা পড়ে আসে, আঁধার জমিছে আসি,
এখনো তবুও এলো না ফিরিয়া আমিনা সর্বনাশী।
দেখ্ দেখ্ দূরে মাঝ-দরিয়ায়
কাল চুল যেন ঐ দেখা যায়–
কাহার শাড়ির আঁচল-আভাস সহসা উঠিছে ভাসি ?
আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী ?

পারিব না – কালীপ্রসন্ন ঘোষ

‘পারিব না’ একথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার;
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
একবার না পারিলে দেখ শতবার।

পারিবে না বলে মুখ করিও না ভার,
ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার।
অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা,
তোমায় তো দেখি নাক তাদের আকার
তবে কেন ‘পারিব না’ বল বার বার ?

জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার,
হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,
সাঁতার শিখিতে হলে
আগে তবে নাম জলে,
আছাড়ে করিয়া হেলা ‘হাঁট’ আর বার;
পারিব বলিয়া সুখে হও আগুসার।

এমন যদি হতো – সুকুমার বড়ুয়া

এমন যদি হতো
ইচ্ছে হলে আমি হতাম
প্রজাপতির মতো
নানান রঙের ফুলের পরে
বসে যেতাম চুপটি করে
খেয়াল মতো নানান ফুলের
সুবাস নিতাম কতো ।
এমন হতো যদি
পাখি হয়ে পেরিয়ে যেতাম
কত পাহাড় নদী
দেশ বিদেশের অবাক ছবি
এক পলকের দেখে সবই
সাতটি সাগর পাড়ি দিতাম
উড়ে নিরবধি ।
এমন যদি হয়
আমায় দেখে এই পৃথিবীর
সবাই পেতো ভয়
মন্দটাকে ধ্বংস করে
ভালোয় দিতাম জগৎ ভরে
খুশির জোয়ার বইয়ে দিতাম
এই দুনিয়াময় ।
এমন হবে কি ?
একটি লাফে হঠাৎ আমি
চাঁদে পৌঁছেছি !
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
দেখে শুনে ভালো করে
লক্ষ যুগের অন্ত আদি
জানতে ছুটেছি । (ছড়া কবিতা)

নন্দলাল – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ-
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল’ ?
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল ?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ !’

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা !
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা।’
নন্দ বলিল, ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি ?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারি দিক্।’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক !’

নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িলো ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যতো তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, “আ-হা-হা ! কর কি, কর কি ! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই ?
বলো ক’বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা”
তখন সকলে বলিল- “বাহবা বাহবা বাহবা বাহা !”

নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’

হাট্টিমাটিম টিম – রোকনুজ্জামান খান

(হাট্টিমাটিম টিম’।
তারা মাঠে পাড়ে ডিম,
তাদের খাড়া দুটো শিং,
তারা হাট্টিমাটিম টিম।)

টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।

বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।

সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।

উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।

সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।

উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।

চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।

বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।

শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।

গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।

মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।

গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।

হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম। (ছোটদের কবিতা)
.
শিক্ষাগুরুর মর্যাদা – কাজী কাদের নেওয়াজ

বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।

তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”
.
আদর্শ ছেলে -কুসুমকুমারী দাশ

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
“মানুষ হইতে হবে” — এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ?
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয় ?
সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায় |
সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ —
“মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন” |
কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার
সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ
.
বাংলা ভাষা – অতুলপ্রসাদ সেন

মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে,
তোমার বোলে,
কতই শান্তি ভালোবাসা!

কি যাদু বাংলা গানে!
গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,
গেয়ে গান নাচে বাউল,
গান গেয়ে ধান কাটে চাষা!

বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্‌,
হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-
ঐ ফুলেরই মধুর রসে,
বাঁধলো সুখে মধুর বাসা!

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে,
আনলো মালা জগৎ জিনে!
তোমার চরণ-তীর্থে আজি,
জগৎ করে যাওয়া-আসা!

ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা,
আনল দেশে ভক্তি-ধারা,
আছে কৈ এমন ভাষা,
এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা?

ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে,
ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;
ঐ ভাষাতেই বলবো হরি,
সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা!

মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা! (বিখ্যাত ছড়া কবিতা)
.
পড়ালেখা করে যেই – মদনমোহন তর্কালঙ্কার

লেখা পড়া করে যেই।
গাড়ী ঘোড়া চড়ে সেই।।
লেখা পড়া যেই জানে।
সব লোক তারে মানে।।
কটু ভাষী নাহি হবে।
মিছা কথা নাহি কবে।।
পর ধন নাহি লবে।
চিরদিন সুখে রবে।।
পিতামাতা গুরুজনে।
সেবা কর কায় মনে।।
.
পথিক – রেদোয়ান মাসুদ

পথ হারিয়ে ভীত পথিক এদিক ওদিক চায়
আশেপাশে আছে কি কেউ যদি পাওয়া যায়।
হঠাৎ করে নীল আকাশে কালো ঘোড়া নাচে
তাইতো দেখে পথিক এবার দৌড়ে যেন বাঁচে।
পথ হারিয়ে এভাবেই সে দিশেহারা আজ
এমন সময় কেনই-বা মেঘ দিলো কালো সাজ।
এরই মাঝে হঠাৎ করে হলো বজ্রপাত
বজ্রপাতের বিকট শব্দে মাথায় পড়লো হাত।
শব্দ শুনে দূরে থেকে কত মানুষ এলো
এই বিপদে পথিক এবার লোকের দেখা পেলো।
অবশেষে তাঁরা তাকে পথ দেখিয়ে দিলো
বিপদ যেন বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিলো।
বিপদে তাই করো না কেউ পথিকের ঐ ভয়
একটি বিপদ তাড়াতে যে অন্য বিপদ হয়।
.
পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল – মদনমোহন তর্কালঙ্কার

পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায়-পাতায় পড়ে নিশির শিশির।।
ফুটিল মালতী ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল ॥

গগনে উঠিল রবি সোনার বরণ।
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন ॥
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ॥
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ ॥

আমাদের গ্রাম – বন্দে আলী মিঞা

আমাদের ছোটো গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে কেহ নাহি পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই
একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।
হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি,
পিতা-মাতা গুরুজনে সদা মোরা ডরি।
আমাদের ছোটো গ্রামে মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
মাঠভরা ধান আর জলভরা দিঘি,
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
আমগাছ জামগাছ বাঁশ ঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন।
সকালে সোনার রবি পূব দিকে ওঠে
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফোটে।
.
বৃষ্টির ছড়া – ফররুখ আহমদ

বৃষ্টি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।
নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষটি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।
মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।
.
ঝুমকো জবা – ফররুখ আহমদ

ঝুমকো জবা বনের দুল
উঠল ফুটে বনের ফুল।
সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে,
ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে।
সেই দুলুনির তালে তালে,
মন উড়ে যায় ডালে ডালে।
.
মনুষ্যত্ব – কুসুমকুমারী দাশ

একদিন লিখেছিনু আদর্শ যে হবে
“কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে” |
আজ লিখিতেছি বড় দুঃখ লয়ে প্রাণে
তোমরা মানুষ হবে কাহার কল্যাণে ?
মানুষ গড়িয়া ওঠে কোন্ উপাদানে ;
বাঙালি বোঝেনি তাহা এখনো জীবনে—
পুঁথি হাতে পাঠ শেখা—দু-চারটে পাশ
আজিকার দিনে তাহে মিলে না আশ্বাস,
চাই শৌর্য, চাই বীর্য, তেজে ভরা মন
“মানুষ হইতে হবে” হবে এই পণ—
বিপদ আসিলে কাছে হবে আগুয়ান
দুই খানি বাহু বিশ্বে সবারি সমান—
দাতার যে দান তাহা সকলেই পায়
কেউ ছোট কেউ বড় কেন হয়ে যায়!
কেন তবে পদতলে পড়ি বারবার ?
“মনুষ্যত্ব” জাগাইলে পাইব উদ্ধার— |
যত অপমান, যত লাঞ্ছনা পীড়ন
একতার বলে সব হইবে দমন!
তেজীয়ান, বলীয়ান সেই ছেলে চাই
সোনার বাংলা আজি হারায়েছে তাই |
আবার গড়িতে হবে বীর শিশুদল,
বাংলার রূপ যাহে হবে সমুজ্জ্বল—
.
আদর্শ ছেলে – কুসুমকুমারী দাশ

আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ।
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?
হাত পা সবারই আছে, মিছে কেন ভয়?
চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?
সে ছেলে কে চাই বল, কথায় কথায়
আসে যার চোখে জল, মাথা ঘুরে যায়?
মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান,
তোমরা ‘মানুষ’ হলে দেশের কল্যাণ।
.
জোনাকিরা – আহসান হাবীব

তারা- একটি দুটি তিনটি করে এলো
তখন- বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া
বইছে এলোমেলো,
তারা- একটি দু’টি তিনটি করে এলো।
থই থই থই অন্ধকারে
ঝাউয়ের শাখা দোলে
সেই- অন্ধকারে শন শন শন
আওয়াজ শুধু তোলে।
ভয়েতে বুক চেপে
ঝাউয়ের শাখা , পাখির পাখাউঠছে কেঁপে কেঁপে ।
তখন- একটি দু’টি তিনটি করে এসে
এক শো দু শো তিন শো করে
ঝাঁক বেঁধে যায় শেষে
তারা- বললে ও ভাই, ঝাউয়ের শাখা,
বললে, ও ভাই পাখি,
অন্ধকারে ভয় পেয়েছো নাকি ?
যখন- বললে, তখন পাতার ফাঁকে
কী যেন চমকালো।
অবাক অবাক চোখের চাওয়ায়
একটুখানি আলো।
যখন- ছড়িয়ে গেলো ডালপালাতে
সবাই দলে দলে
তখন- ঝাউয়ের শাখায়- পাখির পাখায়
হীরে-মানিক জ্বলে।
যখন- হীরে-মানিক জ্বলে
তখন- থমকে দাঁড়াঁয় শীতের হাওয়া
চমকে গিয়ে বলে-
খুশি খুশি মুখটি নিয়ে
তোমরা এলে কারা?
তোমরা কি ভাই নীল আকাশের তারা ?আলোর পাখি নাম জোনাকি
জাগি রাতের বেলা,
নিজকে জ্বেলে এই আমাদের
ভালোবাসার খেলা।
তারা নইকো- নইকো তারা
নই আকাশের চাঁদ
ছোট বুকে আছে শুধুই
ভালোবাসার সাধ।
.
ইচ্ছা – আহসান হাবীব

মনারে মনা কোথায় যাস?
বিলের ধারে কাটব ঘাস।
ঘাস কি হবে?
বেচব কাল,
চিকন সুতোর কিনব জাল।
জাল কি হবে?
নদীর বাঁকে
মাছ ধরব ঝাঁকে ঝাঁকে।
মাছ কি হবে?
বেচব হাটে,
কিনব শাড়ি পাটে পাটে।
বোনকে দেব পাটের শাড়ি,
মাকে দেব রঙ্গিন হাঁড়ি।
.
হাসি – রোকনুজ্জামান খান

হাসতে নাকি জানেনা কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই।

খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে

কাজল বিলে শাপলা হাসে
হাসে সবুজ ঘাস।
খলসে মাছের হাসি দেখে
হাসে পাতিহাঁস।

টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে,
ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে

দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা
হাসতে সবাই চায়
বোয়াল মাছের দেখলে হাসি
পিলে চমকে যায়।

এত হাসি দেখেও যারা
গোমড়া মুখে চায়,
তাদের দেখে পেঁচার মুখেও
কেবল হাসি পায়।
.
কাজলা দিদি – যতীন্দ্রমোহন বাগচী

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?

বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক’রে রবে?
আমিও নাই—দিদিও নাই—কেমন মজা হবে!

ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,—
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
.
কাজের লোক – নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

মৌমাছি, মৌমাছি
কোথা যাও নাচি নাচি
দাঁড়াও না একবার ভাই।

ওই ফুল ফোটে বনে
যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।

ছোট পাখি, ছোট পাখি
কিচিমিচি ডাকি ডাকি
কোথা যাও বলে যাও শুনি।

এখন না কব কথা
আনিয়াছি তৃণলতা
আপনার বাসা আগে বুনি।

পিপীলিকা, পিপীলিকা
দলবল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।

শীতের সঞ্চয় চাই
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই
ছয় পায়ে পিলপিল চলি।
.
ট্রেন – শামসুর রাহমান

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই ?

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,
দিন কেটে যায় বেশ।

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
একটু কেশে খক।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
ঝক ঝকাঝক ঝক।.
.
আমাদের ছোট নদী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।
.
প্রভাতী – কাজী নজরুল ইসলাম

ভোর হোলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!

ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকী ছোট রে!

রবি মামা
দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান
গায় গান
শোনো ঐ, ‘রামা হৈ!’

ত্যাজি’ নীড়
ক’রে ভিড়
ওড়ে পাখী আকাশে,
এন্তার
গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে!

চুল বুল
বুল বুল
শিস দেয় পুস্পে,

এইবার
এইবার
খুকুমনি উঠবে!

খুলি’হাল
তুলি’ পাল
ঐ তরী চল লো,

এইবার
এইবার
খুকু চোখ খুললো!

আলসে
নয় সে
ওঠে রোজ সকালে,

রোজ তাই
চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।

উঠল
ছুটল
ঐ খোকাখুকী সব,

‘উঠেছে
আগে কে’
ঐ শোনো কলরব।

নাই রাত
মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে
ভগবানে
তুমি’বর মাগো রে! (চিরায়িত ছড়া কবিতা)
.
লিচু চোর – কাজী নজরুল ইসলাম

বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।

পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,

ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।

আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল! …

সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা…!
.
মামার বাড়ি – জসীম উদ্‌দীন
আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা,
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
মামার বাড়ি পদ্মপুকুর
গলায় গলায় জল,
এপার হতে ওপার গিয়ে
নাচে ঢেউয়ের দল।

দিনে সেথায় ঘুমিয়ে থাকে
লাল শালুকের ফুল,
রাতের বেলা চাঁদের সনে
হেসে না পায় কূল।
আম-কাঁঠালের বনের ধারে
মামা-বাড়ির ঘর,
আকাশ হতে জোছনা-কুসুম
ঝরে মাথার ‘পর।

রাতের বেলা জোনাক জ্বলে
বাঁশ-বাগানের ছায়,
শিমুল গাছের শাখায় বসে
ভোরের পাখি গায়।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের শাখায় উঠি
রঙিন করি মুখ।
কাঁদি-ভরা খেজুর গাছে
পাকা খেজুর দোলে
ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই
মামার দেশে চলে।
.
রাখাল ছেলে – জসীম উদ্‌দীন

“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! বারেক ফিরে চাও,
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?”

ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ,
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা,
সেথায় আছে ছোট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,
সাঁঝ-আকাশের ছড়িয়ে-পড়া আবীর রঙে নাওয়া,
সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা-
সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না।”

“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! আবার কোথা ধাও,
পুব আকাশে ছাড়ল সবে রঙিন মেঘের নাও।”

“ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতো খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা,
বলছে ডেকে, ‘গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা।’
সারা মাঠের ডাক এসেছে, খেলতে হবে ভাই।
সাঁঝের বেলা কইব কথা এখন তবে যাই।’

“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা।”

কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙল দিয়ে খেলি
নিড়িয়ে দেই ধানের ক্ষেতের সবুজ রঙের চেলী।
রিষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হওয়ার সুখে।
টির বোনের ঘোমটা খুলে চুমু দিয়ে যায় মুখে।
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশী পউষ-পাগল বুড়ী,
আমরা সেথা চষতে লাঙল মুশীদা-গান জুড়ি।
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা-লাঙল-চষা,
সারাটা দিন খেলতে জানি, জানিই নেক বসা’।
.
হনহন পনপন – সুকুমার রায়

চলে হনহন
ছোটে পনপন

ঘোরে বনবন
কাজে ঠনঠন

বায়ু শনশন
শীতে কনকন

কাশি খনখন
ফোঁড়া টনটন

মাছি ভনভন
থালা ঝন ঝন।
.
আবোল তাবোল – ১ -সুকুমার রায়

আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।
আয় ক্ষ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্‌ ধিন্‌,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে–
আয়রে তবে ভুলের ভবে
অসম্ভবের ছন্দেতে।।
.
সৎপাত্র – সুকুমার রায়

শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো
রঙ যদিও বেজায় কালো ;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।

মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
আরেকটি সে তৈরী ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে ।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর !
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—
যহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?
.
খেলা – রেদোয়ান মাসুদ

এই যে খোকা করছো তুমি কতো রকম খেলা
সূর্য ডুবছে সন্ধ্যা হচ্ছে চলে যাচ্ছে বেলা
চেয়ে দ্যাখো দূর আকাশে উঠছে কত তারা
মায়ের কথা ভুলে গেছ খুঁজছে পুরো পাড়া।
দুই চোখেতে জলের রাশি পায় না তোমার খোঁজ
এভাবে আর কত ফেলবে তার চোখের জল রোজ।
মাকে যদি হারাও তুমি পাবে না আর খুঁজে
বুঝবে সেদিন যেদিন মায়ের চক্ষু যাবে বুজে।
.
বাক বাক্‌ কুম পায়রা – রোকনুজ্জামান খান

বাক বাক্‌ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি
চড়বে সোনার পালকি।
.
ইতল বিতল – সুফিয়া কামাল
ইতল বিতল
গাছের পাতা
গাছের তলায় ব্যাঙের মাথা।
বৃষ্টি পড়ে ভাঙ্গে ছাতা
ডোবায় ডুবে ব্যাঙের মাথা।
.
হেমন্ত – সুফিয়া কামাল
সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?

আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।

সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।

আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।

হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।
.
কাকাতুয়া – যোগীন্দ্রনাথ সরকার

কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুমণি,
সোনার ঘড়ি কি বলিছে, বল দেখি শুনি ?

বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্,
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক।
সময় চলিয়া যায়-
নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।”
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্।”

কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুধন,
অন্য কোন কথা ঘড়ি বলে কি কখন ?

মাঝে মাঝে বল ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্,
মানুষ হইয়ে যেন হয়ো না ক সঙ।
ফিটফিটে বাবু হলে,
ভেবেছ কি লবে কোলে ?
পলাশে কে ভালবাসে দেখে রাঙা রঙ্।”
মাঝে মাঝে বলে ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্।”
.
তোতা পাখি – যোগীন্দ্রনাথ সরকার

আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ,
কথা কও না কেন বউ ?
কথা কব কী ছলে,
কথা কইতে গা জ্বলে !

ছড়া কবিতা, ছোটদের ছড়াঃ ছড়া কবিতা’র অনেগুলো ধারা রয়েছে। যেমন-  হাস্যরসাত্মক,বিদ্রুপাত্মকগীতি,  নাটকমহাকাব্য, প্রণয়োপাখ্যান, রচনাপ্রেমধর্মী, ব্যঙ্গকাব্য, কাব্যপুরাণ, বিয়োগাত্মকহাস্য, বিয়োগাত্মক ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যে যারা বড় হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ছড়া কবিতার মধ্যমে নিজেদের জানান দিয়েছেন। যদিও বর্তমান সময় জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মাঝে ছড়া লেখার প্রবণতা কমেছে তবুও আমাদের পাঠ্যবইয়ে এখনও ছড়ার দাপট রয়ে গেছে।  ছড়াকে অনেকে ছন্দ কবিতাও বলে থাকে।